
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরআমখাওয়া ইউনিয়নের সানন্দবাড়ী লম্বাপাড়া এলাকার একটি হতদরিদ্র পরিবার। মৃত ছফর আলীর সহধর্মিণী শামেলা বেগমের বড় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা আক্তার (৩০), মানসিক প্রতিবন্ধী বাবুল (২৭) ও একমাত্র উপার্জনক্ষম লাভলুকে (২৫) নিয়ে চলে সংসার।
শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা বলেন, ‘আমি ভিক্ষা ও অনুদান চাই না। আমার চাকরি করার সকল যোগ্যতা ও সক্ষমতা আছে। আমার মাথা ঠিক আছে, আমি কম্পিউটারের কাজ জানি, আমি চাকরি চাই। আমি চাই না কেউ আমার জন্য ভিক্ষার হাত বাড়াক।’ জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা সানন্দবাড়ী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় হতে ২০১০ সালে এসএসসি পাশ করেন। ২০১২ সালে সানন্দবাড়ী ডিগ্রী কলেজ হতে এইচএসসি। ভিক্ষা নয়, নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেতে চান প্রতিবন্ধী শাহিদা। প্রতিবন্ধী শাহিদা আক্তার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ডিগ্রীর পাশাপশি অর্জন করেছেন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেলসহ কম্পিউটারের বিভিন্ন দক্ষতা। তবুও মিলছে না কোনো চাকরি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য কারো উপর নির্ভরশীল না থেকে নিজের যোগ্যতায় স্বাবলম্বী হতে চান শাহিদা। কিন্তু চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শাহিদার।
যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী হওয়ায় বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার ভাইভা পর্যন্ত গিয়ে বাদ পড়তে হচ্ছে তাকে। শাহিদা জানান, ‘বছর কয়েক আগে আপনারা নিউজ প্রকাশ করার পর কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পক্ষ থেকে একটা কম্পিউটার কিনে দিয়ে ছিলো, কিন্তু ঘরের চালা ভালো না থাকায় বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাকরি করার মতো আমার কি যোগ্যতা নেই? অনেক স্বল্প শিক্ষিত লোকজনও চাকরি করে, তবে বিএ পাস করে আমি কেন চাকরি পাবো না? আমার কি চাকরি করার অধিকার নেই? তাহলে আমি কোন দেশে বাস করি? কেমন দেশে বাস করি?’ সে বাংলাদেশ সরকার ও সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিকট জোরালো দাবি জানান। এটি বলেই সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দু’চোখে বৃষ্টির ফোটার মতো জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
সানন্দবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শাহিদা আমার কলেজের একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল, ২০১৭ সালে বি এ (স্নাতক) পাস করেছেন। সরকার কাছে আবেদন জানাচ্ছি তার একটা কর্মসংস্থান করার জন্য।’
চরআমখাওয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহিদা একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে, তার একটা কর্মসংস্থান জরুরি।’
২ নং চরআমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, ‘শাহিদা একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে। সরকার যদি স্থায়ীভাবে তার চাকরির ব্যবস্থা করে, তাহলে কারো ওপর ভরসা রাখতে হবে না বরং শাহিদার পরিবার স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবে।’
এসআর