
দক্ষিণ বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রশাসনিক ও শ্রেণী কার্যক্রম চলছে অধ্যক্ষকে ছাড়াই। এর আগে সোমবার (১৪ জুলাই) টানা ৯ ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের পদত্যাগ দাবিতে অবরুদ্ধ থাকেন কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া। পরে রাত সোয়া ১১ টার দিকে পুলিশি পাহারায় অধ্যক্ষকে তার নিজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
পরদিন, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কলেজে দেখা যায়নি অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া’কে। কলেজে না আসার কারণ জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছিলো, আমরা সেটি নিয়ে আলোচনাও করেছিলাম। কিন্তু, কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমাকে অবরুদ্ধ করে আমার পদত্যাগ দাবি তুলে ও আমাকে লিখিত মুছলেকা দিতে বলে। কিন্তু, আমি সেটা দিইনি। আমি কেন লিখিত মুছলেকা দিবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে, এটা একটা নির্দিষ্ট মহলের ষড়যন্ত্র। তারা শিক্ষার্থীদেরকে এখানে ব্যবহার করেছে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। আমি আমার উর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। তারা আমাকে যে সিদ্ধান্ত দিবে সে অনুযায়ীই আমি কাজ করবো। আপাতত ভিক্টোরিয়া কলেজে যাবো না আমি।’
এদিকে, ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জানতে চাইলে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যক্ষ স্যার আমাদের দেওয়া দাবিগুলো নিয়ে কোনো কাজ করেননি। আমরা দুই দিনের সময় দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো কাজ করেননি। এছাড়াও গতবছর বৈষম্যের যে ছাত্র আন্দোলনের আহত তামিমের ঘটনায় কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। জড়িতদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। এছাড়াও ভিক্টোরিয়া কলেজের হলগুলোতে নানা সমস্যায় জর্জরিত। তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি সব বিষয়ে। তাই আমরা এমন অধ্যক্ষকে আর কলেজে চাই না। আমরা একজন শিক্ষার্থীবান্ধব অধ্যক্ষকে আমাদের কলেজে চাই। আশা করছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল মজিদ জানান, অধ্যক্ষ স্যার মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশের সহযোগিতায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। বিষয়টি উর্ধ্বতনরাও জানে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এই বিষয়ে। উপাধ্যক্ষ হিসেবে আমি রুটিন দায়িত্ব পালন করছি। ভর্তি কার্যক্রম, পরীক্ষা ও ক্লাস যথানিয়মে চলবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রী শাখার শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানায় এবং দুই কার্যদিবস সময় দেয়। পরে, অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না আসায় সোমবার (১৪ জুলাই) কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে তারা বিভিন্ন স্লোগানে অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন।
শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৯ দফা দাবিগুলো হলো: কলেজে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন, ডিগ্রি শাখার জন্য পৃথক ও আধুনিক ক্যাম্পাস স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার, বহিরাগত, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু, আবাসিক হল ও আশপাশের হোটেল এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি, আধুনিক ওয়াশরুম এবং যুগোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আলাদা ফান্ড গঠন, কলেজের সব ধরনের আয়-ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।