• শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
Headline
আমাদের উত্তরা ফাউন্ডেশন এর নতুন কমিটি গঠন: সভাপতি আলী হোসেন, সম্পাদক এলেন বিশ্বাস নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া জনসাধারণের জন্য হুমকির মুখে – দাবী ঠিকাদারদের জামায়াত-শিবিরের কারণে গণঅধিকার-এনসিপি ক্ষতিগ্রস্ত: রাশেদ খান পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুঁশিয়ারি ভারতের সেনাপ্রধানের সমঝোতা হলে ১০০ আসন ছেড়ে দিতে পারে জামায়াত’ টাঙ্গাইলে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি, থানায় জিডি বিএনপি শিগগিরই ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে: সালাহউদ্দিন এনসিপি নেতা মাহিন তালুকদারের ছবি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার উত্তরায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে “আমাদের উত্তরা ফাউন্ডেশন” ভ্রাম্যমাণ টয়লেট পরিচালনা শিখতে বিদেশ যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার রাজস্ব ব্যয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৭৬ Time View
Update : রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষুদ্র ভাণ্ডার চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা আজ নানা প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমের জন্য সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের ফয়েজ লেকে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তহবিল ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা ও বিতর্কিত ব্যয়ের কারণে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে।

প্রাণীকল্যাণ ও আধুনিকায়নের নামে গঠিত ‘চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা উন্নয়ন ও প্রাণীকল্যাণ তহবিল’ থেকে পিকনিক বিজ্ঞাপন, দিবস উদযাপন এবং ব্যক্তিগত অনুদানের নামে প্রায় ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। এসব খরচের অধিকাংশই নীতিগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং সরকারি নিয়মের সঠিক প্রয়োগ ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলে নথি বিশ্লেষণে জানা গেছে।

১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। কয়েক দশকের মধ্যে এটি ১০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হয়ে দেশের অন্যতম দর্শনার্থীবহুল বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে ৬৮ প্রজাতির ৫২০টির বেশি প্রাণী। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেন, আর বার্ষিক আয় ৭ কোটি টাকারও বেশি।

প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী, এই আয় থেকে অপারেশনাল খরচ বাদ দিয়ে উদ্বৃত্ত অর্থ একটি নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়, যা প্রাণী সংগ্রহ, বাসস্থান উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং চিড়িয়াখানার সম্প্রসারণে ব্যবহার হওয়ার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক নথি বিশ্লেষণ বলছে, এই তহবিলের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয়েছে অনুদান ও বিজ্ঞাপনের নামে, যা পূর্বে কোনোদিন ঘটেনি।

সরকারি নথি অনুযায়ী, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানমের সিদ্ধান্তে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—

পিকনিক ও পুনর্মিলনী বিজ্ঞাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের নিজস্ব ২৪তম বিসিএস প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশনের গ্র্যান্ড পুনর্মিলনী ও পিকনিকের বিজ্ঞাপনের জন্য দুই দফায় ২ লাখ টাকা।

রংপুরে কর্মরত সহকারী কমিশনার ঝন্টু আলী সরকারকে ব্যক্তিগত অনুদান হিসেবে ১ লাখ টাকা প্রদান।বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ৫ লাখ টাকা ব্যয়, যার কোনো খাত বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ব্যয়ের নথি নেই। ২৫ ও ২৬ মার্চ গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আরও ৫ লাখ টাকা ব্যয়। ঢাকা বিয়াম ফাউন্ডেশনে এসি বিস্ফোরণে হতাহতদের সহায়তায় ৩ লাখ টাকা অনুদান। বিভাগীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন বাবদ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়। এইচএল ফাউন্ডেশন ফর সোশ্যাল এক্সিলেন্সে বিজ্ঞাপনের জন্য ১ লাখ টাকা ব্যয়।ডিসি পার্ক সংস্কারের জন্য রং করায় ব্যয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০৫ টাকা।

চিড়িয়াখানার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রাণীকল্যাণ তহবিল থেকে আগে এক টাকাও বাইরে যেত না। পুরো অর্থ উন্নয়ন, প্রাণী কেনা এবং পরিবেশ উন্নয়নে ব্যয় হতো। কিন্তু সাবেক ডিসি মোমিনুর রহমানের আমল থেকে তহবিল থেকে অনুদান দেওয়ার নতুন রেওয়াজ তৈরি হয়, যা বর্তমানে আরও বেপরোয়া হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতীয় দিবস উদযাপন বা সামাজিক সহায়তার খাত থাকলেও এখন ব্যক্তিগত পছন্দের খাতেও অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে। এটা তহবিল ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্যকে ব্যাহত করছে।’

তহবিল ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ২ কোটি টাকা এফডিআর করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং দীর্ঘদিন ধরে সংকটাপন্ন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে। এই ব্যাংকে রাখা ১ কোটি টাকার এফডিআর নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে এবং আর্থিক দুর্বলতার জন্য বহুল সমালোচিত। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন– ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে সরকারি তহবিল কেন রাখা হলো? এর পেছনে কি বিশেষ স্বার্থ জড়িত?

 

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে অনুদান দেওয়ার অধিকার আমার আছে। রংপুরের এক সহকারী কমিশনার মারা গেছেন, তার পরিবারকে ১ লাখ টাকা দিয়েছি। আমি কখনোই অনৈতিক কিছু করিনি। অন্যান্য খরচও বিজ্ঞাপন ও দিবস উদযাপনের খাতেই হয়েছে। এর বাইরে কিছু খরচ হয়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই।’ বিতর্কিত ব্যাংকে এফডিআরের প্রসঙ্গে তিনি নীরবতা পালন করেন।

এই বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, ‘চিড়িয়াখানার তহবিল থেকে ব্যক্তিগত অনুদান দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তথ্য পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাণীকল্যাণ ও আধুনিকায়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ যদি এভাবে বিতরণ হতে থাকে, তবে চিড়িয়াখানার রক্ষণাবেক্ষণ, প্রাণী সংগ্রহ ও অবকাঠামো উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। চিড়িয়াখানার আয় ব্যবস্থাপনায় কঠোর স্বচ্ছতা ও স্বাধীন অডিট ব্যবস্থা চালু করা জরুরি, যাতে এই জাতীয় অস্বচ্ছতা রোধ হয়।

 

 

 

 

 

 

Facebook Comments Box


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd
error: Content is protected !!