
বরগুনার আমতলী উপজেলায় কোনো ধরনের অনুমোদন বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই খোলাবাজারে দাহ্য জ্বালানি তেল বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ও আঞ্চলিক সড়কের পাশে খোলা প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেন বিক্রি করা হচ্ছে। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা কিংবা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। প্রশাসনের চোখের সামনে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চললেও কার্যকর কোনো অভিযান বা নজরদারি চোখে পড়ছে না।
সোমবার (২৮ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আমতলী একে স্কুল চৌরাস্তায় মোঃ জুয়েল, পঞ্চায়েত বাড়ি স্ট্যানে মিরাজ, আমড়াগাছিয়া স্ট্যানে রাজিব, মহিষকাটা বাস স্ট্যানে মোঃ ইসমাইল, গোসখালী বাজারে খবির মাতুব্বর ও আবুল মাতুব্বরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্তত অর্ধশতাধিক দোকানে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই খোলা বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হচ্ছে।
অনেকেই দোকানে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বোতলে ভরে তেল বিক্রি করছেন। দুই লিটার, এক লিটার ও আধা লিটারের প্লাস্টিক বোতলে এসব তেল বিক্রি হচ্ছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত পরিবেশে।
জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, আধা-পাকা স্থাপনা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, নিরাপদ সংরক্ষণাগার, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং ট্রেড লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ দোকানে এসব শর্ত পূরণ না করে ব্যবসা চালানো হচ্ছে। এমনকি অনেক দোকানের ট্রেড লাইসেন্সও মেয়াদোত্তীর্ণ।
স্থানীয়রা জানান, এসব দোকানে নিম্নমানের ও ভেজাল তেল বিক্রি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন মোটরযানের ইঞ্জিন নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে লিটারপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেশি দাম নিচ্ছে বিক্রেতারা। ফলে সাধারণ গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
আমতলী পৌর শহরের ব্যবসায়ী মাসুম বিল্লাহ সময়ের কণ্ঠস্বর’কে বলেন, ‘পেট্রোলপাম্প দূরে হওয়ায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় দোকান থেকেই তেল কিনতে হয়। তবে এসব তেল পরিমাণে কম দেয় এবং ব্যবহার করলে গাড়িতে সমস্যা দেখা দেয়।’
এ বিষয়ে আমতলী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ শাহাদাৎ হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘বাজারে এভাবে তেল বিক্রি করলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারে এ ধরনের তেল বিক্রি করতে হলে অবশ্যই ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সসহ অন্যান্য অনুমোদন এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকা বাধ্যতামূলক।’
আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান সময়ের কণ্ঠস্বর’কে বলেন, ‘বিধিবহির্ভূতভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি সম্পূর্ণ অপরাধ। বাজার ও সড়কের পাশে যেভাবে দাহ্য পদার্থ খোলা বোতলে বিক্রি করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অচিরেই এসব দোকানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রোকনুজ্জামান খান সময়ের কণ্ঠস্বর’কে বলেন, ‘খোলাবাজারে এভাবে জ্বালানি তেল বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান ছাড়া এসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তা না হলে অচিরেই কোনো ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।