• শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

৩২ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ বেআইনিভাবে ১০ বছর বোট ক্লাবের সভাপতি ছিলেন বেনজীর

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে টানা ১০ বছর বেআইনিভাবে ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি পদ ধরে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি নাসির মাহমুদ। এই সময়ে বেনজীর ক্লাবের প্রায় ৩২ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়ম করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ক্লাবের সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ-এর প্রমাণ মেলায় তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান নাসির মাহমুদ। পাশাপাশি অন্যান্য শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সাভারের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাব লিমিডেটের রিভারভিউ লাউঞ্জে আয়োজিত ‘বিগত সভাপতি বেনজীর আহমেদের আর্থিক অনিয়ম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

এই ৩২ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ কতখানি সঠিক, এর পরিমাণ বাড়বে নাকি কমবে— তা যাচাইয়ের জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম হোদা ভাসিকে (হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং) নতুন করে আবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বোট ক্লাবের বর্তমান সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চিত থাকেন— ৩২ কোটি থেকে দুই-চার কোটি টাকা কমতে পারে। এর খুব বেশি কমবে না, বরং আরও বাড়তে পারে।’

বেনজীর আহমেদ সভাপতি থাকাকালে নাসির মাহমুদকে তিন বছর বোট ক্লাবে আসতে দেননি বলেও অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি বোট ক্লাবে আসলে গুম করা হতো, আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়া হতো; তার বাহিনী দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারতেন। তার অনেক ক্ষমতা ছিল, আমি শুধুই সাধারণ একজন ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে ফাইট দেওয়ার মতো অবস্থান আমার ছিল না। আমি কিন্তু হাল ছাড়িনি, আইনি লড়াই করে গেছি। আমি তিন বার তার (বেনজীর) নামে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি।’ নিজের অবস্থান বেআইনি বুঝতে পেরে বেনজীর একাধিকবার বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেও জানান নাসির মাহমুদ।

 

ক্লাব কমিটি থেকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে নাসির মাহমুদ বলেন, ‘ক্লাবের এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে তিনি (বেনজীর) আমাকে বাদ দিতে পারেন না। বাদ দেওয়ার অধিকারও তার ছিল না। আমি তাকে (বেনজীর) ভয় পেয়েছিলাম। এখন তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা ক্লাবের প্রায় ৩ হাজার ১০০ সদস্যের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা আমাদের দায়িত্বে থেকে এই কাজটি করছি, ভয়ের কিছু নেই। যদিও উনি (বেনজীর) আমাদের ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন, হয়তো করবেনও। এই দেশে তো অনেক কিছুই হয়। ভবিষ্যতে হবে কিনা আমি জানি না। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করবো, এ বিষয়ে আমরা নির্ভীক।’

বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে নিয়ে ঘটে যাওয়া প্রসঙ্গও আসে সংবাদ সম্মেলনে। পরীমণি-কাণ্ডের সঙ্গে বেনজীরের কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরীমণি-কাণ্ডের পরে আমি তিন বছর বোট ক্লাবে আসতে পারিনি। আমি যেভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছি, তা হওয়ার কথা ছিল না। পরীমণি এই ক্লাবের সদস্য না। তিনি কারও গেস্ট হয়ে ক্লাবে এসেছিলেন। ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনও সদস্য গেস্ট আনতে চান, তবে অনুমতি লাগে। তার (পরীমণি) কোনও অনুমতি ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী, ওই সদস্যের (পরীমণিকে যিনি এনেছেন) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল, কেন অনুমতি ছাড়া ক্লাবে আনা হলো। প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। তার (পরীমণি) উচ্ছৃঙ্খলা আমি মানতে পারিনি।’

সাবেক আইজিপি যেই মুহূর্তে ক্লাবের সভাপতি পদে বসতে চেয়েছেন, তখন তার কাছে টাকা বড় বিষয় ছিল না উল্লেখ করে নাসির মাহমুদ বলেন, ‘তখন তার কাছে বড় ছিল সামাজিক সম্মান। একটি ক্লাবের সভাপতি, যা তা বিষয় নয়। পূর্ণাঙ্গ জাস্টিস (বিচারপতি), মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, সাবেক সচিব, সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এই ক্লাবের সদস্য। বোট ক্লাব, ঢাকা ক্লাব ও উত্তরা ক্লাবসহ এসব ক্লাবের সদস্যরা যাকে সভাপতি বানান, তিনি আসলেই সামাজিকভাবে অত্যন্ত স্বীকৃত ব্যক্তি। উনি (বেনজীর) বিনাভোটে বোট ক্লাবের মতো বড় ক্লাবের সভাপতি হয়ে সামাজিক সম্মান গেইন করতে পারেন। এটা তো হতেই পারে। তিনি (বেনজীর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ডিগ্রি বাতিল করেছে। ডক্টরেট ডিগ্রি উনি কেন কিনে নিয়েছিলেন? নিশ্চয়ই সামাজিক সম্মানের জন্য।’

 

 

 

 

Facebook Comments Box


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd
error: Content is protected !!