• শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

মসজিদ পাকা করে দেয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ করাই তার পেশা

সকালের রিপোর্ট ডেস্ক / ৫৩ Time View
Update : সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

বাঁশখালীতে মসজিদ ও মাদ্রাসার ভবন পাকা করে দেয়ার নামে লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রকাশ ফুয়া আবদুল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামের মাওলানা নুরুল হকের ছেলে মাওলানা আলী আহমদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ এনে এই প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ মামলা রুজু করে তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে।

আবদুল্লাহ মিরসরাই উপজেলার নিজামপুর এলাকার ওবায়দুল হকের ছেলে। তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার মাইজভান্ডার এলাকার ভোটার। তাছাড়া কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া এলাকায় তার শশুর বাড়ি হওয়ার সুবাদে অনেক সময় তার বাড়ি মহেশখালী বলেও পরিচয় দিতেন লোকজনকে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রের সদস্য আবদুল্লাহ ওরফে ফুয়া আবদুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত এর শেখের কাছ থেকে বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ ও মাদ্রাসার ভবন করে দেয়ার নামে লোকজনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। মসজিদ ও মাদ্রাসার ভবন দেয়ার কথা বলে কমিশন হিসেবে এই টাকা নিতেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত মাওলানা আলী আহমদ জানান, আমার গ্রামের মসজিদটি জীর্ণশীর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বন্ধুবান্ধবদের কাছে মসজিদ পাকা করে দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থার সন্ধান করছিলাম। এক ব্যাংক ম্যানেজারের মাধ্যমে প্রতারক আবদুল্লাহর সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি দুটি মসজিদ পাকা করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছে কয়েক দফায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন।

ভুক্তভোগী আলী আহমদ বলেন, ৩ মাসের মধ্যে মসজিদের কাজ শুরুর কথা থাকলেও ৩ বছরেও আমাকে মসজিদ করে দেননি। পরে টাকা ফেরত চাইলে আজ দেবে কাল দেবে করে ২ লাখ টাকার একটি চেক ধরিয়ে দেন। ওই চেকও আর পাস হয়নি। এক পর্যায়ে প্রতারক আবদুল্লাহ আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। রবিবার বিকেলে ফের ৪৫ লাখ টাকার একটি ভবন বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে আমাকে ফোন করে আরও ২ লাখ টাকা দিতে বললে আমি তাকে বাঁশখালী আসতে বলি। পরে লোকজন তাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে।

 

এদিকে রবিবার বিকেলে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে আরও ২ সহযোগীসহ বাঁশখালী উপজেলা সদরে আসেন আবদুল্লাহ। তিনি আসার খবর পেয়ে সেখানে আরও কয়েকজন পাওনাদার জড়ো হন। বিকেল থেকে রাত অবধি নানান দেন দরবারের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জামশেদুল আলমের নির্দেশে তাকে থানায় হস্তান্তর করে এলাকাবাসী।

পাওনাদার মাওলানা তৈয়ব জানান, আমার গ্রাম বাহারছড়ায় মসজিদ করে দেয়ার কথা বলে মসজিদের নকশা ও দলিলপত্র নিয়ে যায় প্রতারক আবদুল্লাহ। আমার কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বাঁশখালী থানায় এই প্রতারককে আটক করা হয়েছে শুনে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।

পেকুয়ার র‍্যাব সদস্য আনিসুর রহমান জানান, ফুয়া আবদুল্লাহ তার ভাতিজা ইবরাহিমকে বিদেশ নেয়ার নামে ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন। বিদেশ নেয়া তো দুরের কথা সেই টাকাও উদ্ধার করতে পারিনি তার কাছ থেকে। এই প্রতারক বাঁশখালী থানায় আটকের খবর শুনে আমার চেক এবং ডকুমেন্ট হোয়াটসঅ্যাপ এ বাঁশখালী থানার ওসিকে পাঠিয়েছি।

এছাড়া বাঁশখালীর চাম্বল এলাকার মাওলানা শামসুল হুদা, পৌরসভার জলদির মাওলানা নছিম, ফটিকছড়ির আশরাফ বিন ইয়াকুব, নাজিরহাটের মোহাম্মদ আতিক, ফটিকছড়ির ওমর ফারুকসহ অনেকেই ফুয়া আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, এই প্রতারক শত শত মানুষের কাছ থেকে এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার রয়েছে একাধিক স্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে সে এই প্রতারণার সাথে জড়িত। এক সময় চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া মাদ্রাসায়ও তার ঘাঁটি ছিল৷ সে একজন পরিচিত প্রতারক। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখার হালদার জানান, প্রতারণার মাধ্যমে লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া ফটিকছড়ি ঠিকানার আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। এরমধ্যে অনেক পাওনাদার থানায় ভীড় করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

 

Facebook Comments Box


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd
error: Content is protected !!