জুলাই-২৪ ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ মীর মুগ্ধের নামে উত্তরা ৭ নং সেক্টর লাবাম্বার মোড়ে তৈরি করা মঞ্চটি নতুন করে রং করা হয়েছে।
গত দুই মাস আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র লীগ দূর্বৃত্তরা পরিকল্পিত ভাবে শহীদ মীর মুগ্ধের প্রতিকৃতিতে কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঔ সময় পুরো উত্তরার ছাত্র সমাজ রাতে দিনে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
সে সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে উত্তরায় ছুটে আসেন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা।
সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য নানান কর্মসূচি ও পালন করেন তারা।
রাতের আধারে পরিকল্পিত ভাবে মীর মুগ্ধের ছবির উপর কালো কালি মাখানোর কয়েকদিন পর এটিকে সুন্দর করে নতুন রূপ দিতে উদ্যোগ নেন স্থানীয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। এর মধ্যে শিল্পী শিবলী হাওলাদার,মনীষা মাফরুহা,শাহ মঈন সালেহ,মোহাম্মদ নাবিল, ফয়সাল মাহমুদ,ইমনসহ আরো কয়েকজন অন্যতম। গত দুই তিন দিন যাবত তারা এটিকে নতুন করে রং তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়ে তুলেছে।
নির্দয় নিষ্ঠুর খুনি হাসিনার দোসরদের গুলিতে নিহত ছাত্র-জনতার মধ্যে শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধের মৃত্যুটি সারা বিশ্বে আলোচিত হয়ে উঠে। ছাত্র-জনতা মীর মুগ্ধের স্মৃতি ধরে রেখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার কবল থেকে দেশ রক্ষায় শহীদদের আত্মদানের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে উত্তরায় তৈরি করা হয় এ মঞ্চ।
জানা যায়, মুগ্ধ মঞ্চ কমিটির উদ্যোগে শিল্পী শিবলী হাওলাদারের নেতৃত্বে শহীদ মীর মুগ্ধ মঞ্চের নতুন ডিজাইন করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নিজ অর্থায়নে শহীদ মীর মুগ্ধ মঞ্চের স্থায়ী ডিজাইন (মনুমেন্ট) এর কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে।
একই সাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে আজমপুরে ও স্থাপিত হতে যাচ্ছে, জুলাই শহীদ স্মৃতি চত্বর।
কোটা সংস্কার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিমানবন্দর মহাসড়কে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ডেকে ডেকে পানি খাওয়ানো মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ শহীদ হয়েছে।
সরকারী চাকুরীতে কোটা সংস্কার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ২০২৪ রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে মীর মুগ্ধ।
পানি লাগবে পানি” মুগ্ধের এই মুখের কথাটি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটেছে।
মুগ্ধ, আবু সাঈদ, যোবায়ের, আসিফ, রাফি, ওয়াসিম, আদনান, ফারুকসহ বুকপেতে দেওয়া ছাত্র-জনতা যারা দিয়েছিল প্রাণ তাদের স্মরণে উত্তরার দেয়ালে দেয়ালে আল্পনা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী চিত্র, আন্দোলনে রক্ত ঝড়া শহিদের স্মরণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছেন ছাত্র-জনতার স্মৃতির প্রকৃতি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের হরেক রকম গ্রাফিতি স্লোগান, দেয়াল লেখনি ও আল্পনার ছোঁয়ায় এখনো রঙিন পুরো উত্তরা।
মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে সেদিন পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন মুগ্ধ।
ঐ সময় দেখা যায়, পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার গ্যাসে জ্বলতে থাকা চোখ মুছতে মুছতেও পানি পানি বলে ছুটে যাচ্ছিলেন সবার কাছে।
১৫ মিনিটের মাথায় সড়কে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটি বুলেট কপালে এসে বিধে শহীদ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুগ্ধ।
গত ১৮ জুলাই বিমানবন্দর মহাসড়ক উত্তরা আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর আগে ছাত্র-জনতাকে পানি খাওয়ানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় মুগ্ধের এই ভিডিওটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আরো বেশি মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে উৎসাহিত করে। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসার পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহত অনেক পরিবার এখন তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি চাইছে।
গণিতে স্নাতক মুগ্ধ এমবিএ পড়ছিলেন, আর তার ছোট ভাই স্নিগ্ধ আইনে স্নাতক। খাওয়া ঘুমানো একসঙ্গে, পড়াশোনা থেকে শুরু করে পোশাক ভাগাভাগি, যমজ দুই ভাই মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ যেন জন্ম থেকেই ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। তারা অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইভারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করছিলেন। মুগ্ধের মৃত্যুর সময় তার গলায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, হাতে ছিলো পানির বোতল।