ভারতে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই পার্থক্য এখন এতটাই স্পষ্ট যে ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেমন ছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ বলে অভিহিত করেছেন এক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কডইনে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হার্দিক জোশি বলেন, ‘ভারতে বর্তমানে আয় ও সম্পদের বৈষম্য ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে।’
ওয়াল্ড ইনইকুয়ালিটি’ ডেটাবেস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তিতে জোশি বলেন, ‘ভারতের শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে দেশটির মোট ৪০.১ শতাংশ সম্পদ। অন্যদিকে, দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র ৬.৪ শতাংশ সম্পদ। আর শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষ দেশের মোট আয় থেকে ৫৭.৭ শতাংশ আয় করেন। এই তথ্য সামনে আসতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এই বিশ্লেষকের বক্তব্য, সংখ্যাগুলো নিছক পরিসংখ্যান নয়। এর মানে ভারতের অর্ধেক মানুষ দৈনিক জীবনের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন, আর একাংশ এলিট শ্রেণি বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত।’
এই চরম বৈষম্যের দায় জোশি দিয়েছেন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে। তার বক্তব্য, এই ব্যবস্থাই ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করে। কর কাঠামো ধনীদের সুবিধা দেয়। শ্রমিকদের কোনো সুরক্ষা নেই, কর্পোরেটের একচেটিয়া আধিপত্যে পিষ্ট হচ্ছে ছোট ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট আর শেয়ার বাজার থেকে যে মুনাফা হয় তা শুধু ধনীদেরই পকেটে যায়। উপরন্তু, রাজনৈতিক চাঁদা ও লবিংয়ের মাধ্যমে ধনীরা নিশ্চিত করেন, যেকোনো সংস্কার তাদের স্বার্থে আঘাত না করে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য ধনীদের ক্ষতি করে না বলে মনে করেন তিনি। তাই তাদের এতে কোনও যায় আসে না। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ থেকে অন্যান্য সবকিছু আদতে বড়লোক মানুষজনই নিয়ন্ত্রণ করেন। দরিদ্রদের জন্য নীতি আনলে তাকে ‘ভিক্ষা’ বলে প্রচার করে। অথচ নিজেরা হাজার হাজার কোটি টাকার কর ছাড়, ভর্তুকি নেন।
এই বৈষম্য দূর করতে হলে কী করা জরুরি?
জোশির মতে, ‘ধনীদের উপযুক্ত হারে কর চাপানো, শ্রমিকদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং কর্পোরেট মনোপলি ভেঙে দেওয়ার মতো সংস্কার ছাড়া এর সমাধান সম্ভব নয়।’
পোস্টের শেষে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এই সিস্টেম কাদের জন্য? সাধারণ মানুষের জন্য, না গুটিকয়েক ধনী পরিবারের স্বার্থরক্ষার জন্য?’