• শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
Headline
খালেদা জিয়াকে ঈদ শুভেচ্ছা জানালেন ছেলে ও পুত্রবধূ-নাতনিরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে গোলাপি গরু ঘিরে চমক, উৎসাহীদের ভিড় বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার, ক্ষো-ভ প্রকাশ প্রবাসীর!যা জানাল বেবিচক শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তির নেই শেষ আব্দুল্লাহপুর বাস কাউন্টারে বিআরটিএ’র অভিযাননন,৮ মামলায় ৭০,০০০ হাজার টাকা জরিমানা শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ চুরি,হারিয়ে যাওয়া থামছেই না এ যেন প্রতিদিনের গল্প উত্তরায় ঈদে চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করা হয়েছে ; ডিসি এনসিপি ঢাকা মহানগর উত্তরের ‘উত্তরা জোন’ প্রধানের দায়িত্ব পেলেন মাশকুর রাতুল

শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ চুরি,হারিয়ে যাওয়া থামছেই না এ যেন প্রতিদিনের গল্প

এলেন বিশ্বাস / ৬২ Time View
Update : সোমবার, ২ জুন, ২০২৫
© Jubair Bin Iqbal www.jbigallery.com Contact Info ☎ +8801714332553 ✉ [email protected]

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ হারিয়ে যাওয়া, লাগেজ ভাঙা এবং লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগাসহ নানা ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অনিচ্ছাকৃত ভুলে আরেকজনের লাগেজ নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চুরির অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে।কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর এই বিমানবন্দরে কীভাবে এবং কারা এই অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগী ও অ্যাভিয়েশন বিশ্লেষকরা।

এসব ভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা ব্যবহার ও নজরদারি বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও ভোগান্তি থামানো যাচ্ছে না।

বুধবার (২৮শে মে) বিকেলে বিমানবন্দরে অবস্থান করলে একজন ভুক্তভোগীর সাথে প্রতিবেদকের পরিচয় হয়, ভুক্তভোগী হলেন কাজী মোশতাক আহম্মেদ। তিনি বলেন গত ৭ জানুয়ারি ওমরাহ পালন শেষে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন তিনি। শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজ আনতে বেল্টের পাশে দাঁড়ান। প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও তিনি লাগেজ পাননি। পরে উপায় না দেখে অভিযোগ দেন বিমানের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগে। তাতেও কোনোভাবে লাগেজ ফিরিয়ে দিতে না পেরে বিমান কর্তৃপক্ষ কাজী মোশতাককে সম্প্রতি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেন ১৯ হাজার টাকা।

ক্ষোভের সঙ্গে ভুক্তভোগী কাজী মোশতাক আহম্মেদ বলেন, ‘লাগেজে ১১ কেজি ওজনের বিভিন্নসামগ্রী ছিল। যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস পরে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৫২০ টাকা। এই বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।’

বিমানের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩টির মতো লাগেজ চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ৬ মাসে ৫৪০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগ জানায়, লাগেজ খুঁজে পাওয়া না গেলে  এয়ারলাইনসগুলো ‘জেএটিএ’র  ক্ষতিপূরণের বিধিমালা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়। খুঁজে না পাওয়া লাগেজের জন্য সর্বোচ্চ ২০ কেজি মালামালের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। যাত্রীরা প্রতি কেজিতে ক্ষতিপূরণ পান ২০ ডলার করে। এ ছাড়া  টিকিট মূল্য, ব্যাগেজ না আসায় যাত্রীর দায় কতটুকু (নিষিদ্ধ পণ্য বহন, মানহীন ব্যাগেট বা কার্টুন বহন), খোয়া যাওয়া পণ্যের দাবির যৌক্তিকতা, ওজন ও অন্য কোনো বিমানে মালামাল পরিবহন করেছেন কি না সেটিও দেখা হয়। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিজনেস ক্লাসের যাত্রীকে ২ হাজার ও ইকোনমি ক্লাসের জন্য ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, লাগেজ চুরির সঙ্গে জড়িত রয়েছে মূলত একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের সদস্যরা যাত্রী সেজে বেল্টের সামনে থেকে অথবা টার্মিনালের বাইরে জটলার মধ্য থেকে লাগেজ বা ব্যাগেজ চুরি করে থাকেন। পরে হারানো লাগেজের জন্য বাড়তি টাকা আদায় করে অথবা লাগেজে তেমন কিছুই না থাকলেও ‘দামি মালামাল ছিল’ বলে মিথ্যা দাবি করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম  বলেন, ‘এমন একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ চুরি বা গায়েবের মতো ঘটনা লজ্জাজনক। লাগেজ বা ব্যাগের নিরাপত্তা বিমানকেই (লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস) নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ, কার্গো হ্যান্ডলিং থেকে শুরু করে লাগেজ বেল্টে যাত্রীর হাতে যাওয়া পর্যন্ত ওই কর্তৃপক্ষই সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। ফলে এই কাজে যারা নিযুক্ত তাদের দায়িত্বশীলতার দিকে ঊর্ধ্বতনদের নজর দেওয়া জরুরি। এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।’

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, চক্রের সদস্যরা ‘ক্যাটারিং গেট’ দিয়ে বেল্টের ওপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে ক্যামেরার আওতার বাইরে চলে যান। তাদের সঙ্গে থাকে ভুয়া পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও হ্যান্ডব্যাগ। অনেক সময় শার্ট ও বেল্টের নিচে লুকিয়ে রাখে তসবি ও টুপি। দ্রুত টয়লেটে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে মাথায় টুপি পরে তসবি গণনা শুরু করে। সুযোগ বুঝে এক সময় তারা লাগেজটানা বেল্টের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। যে লাগেজটি অনেকক্ষণ ঘোরার পরেও কেউ তুলে নেন না সেটিকে তারা টার্গেট করেন। পরে সুযোগ বুঝে সেই লাগেজটি নামিয়ে নিয়ে কৌশলে সটকে পড়েন।

এর মধ্যে গত ২০ জানুয়ারি লুৎফুন্নেসা নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আমেরিকান নাগরিক এবং মে এর প্রথম সপ্তাহে সৌদিপ্রবাসী যাত্রী মোশাররফ হোসেন বিমানবন্দরে তাদের লাগেজ হারিয়ে ফেলেন। এরপর তারা উভয়েই বিষয়টি এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে (এপিবিএন) জানান। পরে এপিবিএনের সহযোগিতায় তারা হারানো লাগেজ ফিরে পান। এ ছাড়া গত মাসে পাবনার সুজানগর উপজেলার বাসিন্দা সৌদি আরবপ্রবাসী আরিফ প্রামাণিক দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে দুষ্কৃতকারীরা তার টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর এপিবিএনের কাছে অভিযোগ করলে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই মালামালসহ দুষ্কৃতকারীদের আটক করা হয়। এপিবিএন পরে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারকৃত টাকা ও মালামাল বুঝিয়ে দেয়।

এয়ারপোর্ট এপিবিএনের  একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  জানান, ‘প্রতিদিন এই ধরনের অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। অভিযোগ পেলে পেশাদারত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বা ভুক্তভোগীদের আইনি সহযোগিতা দিয়ে থাকি। যেভাবেই হোক হারানো মালামাল বা লাগেজ উদ্ধার করে ফেরত দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।’

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর  বলেন, ‘চুরি ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যাগেজ নিজস্ব সিকিউরিটি স্কোয়াড দিয়ে আনা-নেওয়া হয়। তারা দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাগেজ ‘বেল্টে ড্রপ’ করে, যা বিমান নিরাপত্তা শাখা মনিটরিং করে থাকে। নিরাপত্তা কর্মীরা সব স্টাফদের দেহ তল্লাশি করে থাকেন। এ ছাড়া কাস্টমস হলের আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট থেকে ট্যাগ মিলিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হয়।’ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের বডি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। তাই চুরি হওয়ার সুযোগ নেই। শতভাগ চুরি ঠেকাতে কাজ করছে বিমান।’

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থাই এয়ারওয়েজের বিমানে ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে ফেরেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল। ইমিগ্রেশন পার হয়ে ব্যাগ হাতে পাওয়ার পর তিনি দেখেন, ব্যাগটি ছেঁড়া ও মূল্যবান জিনিস চুরি হয়েছে। প্রথমে থাই এয়ারওয়েজের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে বিমানের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগকে জানান। এরপর লাগেজ-ব্যাগেজের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠানোর পরও কোনো উত্তর মেলে না।

Facebook Comments Box


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
bdit.com.bd
error: Content is protected !!