শুধু পুরুষরাই নন, বর্তমানে অনেক নারীরাও ধূমপানে আসক্ত। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে যখন সিগারেট খাওয়ার গড় প্রবণতা কমছে। তবে বাংলাদেশে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা।
ধূমপানের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। দিনে মাত্র একটি সিগারেট খাওয়ার ক্ষেত্রেও হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি দিনে ২০টি সিগারেট খাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় মাত্র ৫০ শতাংশ কমে।
নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যাও কম নয়। ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন নারী সিগারেটে আসক্ত।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বহু দশক ধরে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি চালানোর পরও ধূমপায়ীদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে।
গবেষকরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেহেতু সিগারেট বা তামাক কোম্পানিগুলো যেহেতু নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করছে, সে কারণে নৈতিক প্রচার বাড়ানো দরকার।
ধূমপায়ীদের আইসিইউতে ভর্তির সম্ভাবনা ধূমপায়ীদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। অতিরিক্ত ধূমপানের ফলে অনেক সময় ব্যক্তি মারাও যান। নিকোটিন নারী-পুরুষ সবার শরীরের জন্যই ক্ষতিকর। চিকিৎসকরা বলেছেন, সর্বনাশা এ নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর। তবে নারীদের শরীরে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্রভাব ফেলে সিগারেট।
মা যদি ধূমপায়ী হন, তবে জন্মের সময় নবজাতকের সমস্যার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ধূমপানের কারণে ভ্রূণের ফুসফুস সঠিকভাবে বিকশিত হয় না, এতে গর্ভপাতের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। ধূমপান নারীদের প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম লক্ষণগুলোর ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ী নারীদের পিরিয়ডের সময় ব্যথা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। অধূমপায়ী নারীদের তুলনায় ধূমপায়ী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হয়। ধূমপানের কারণে কিছু রাসায়নিক নারীর শরীরে প্রবেশ করে, যা খুবই বিপজ্জনক বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এই রাসায়নিকগুলো ডিম্বস্ফোটনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
উত্তরা দিয়াবাড়ি একটি রেস্টুরেন্ট এর পাশের ফুটপাতে বসে তরুণ-তরুণী ধূমপান করছিলেন। মেয়েটি শাড়ি ও ছেলেটি টিশার্ট-প্যান্ট পরা ছিলেন। তাদের মধ্যে মেয়েটির হাতে জ্বলন্ত সিগারেট ছিল। এ ঘটনা দেখে প্রথমে মধ্যবয়সী আলি হোসেন নামে স্থানীয় এক ঠিকাদার তাদের ওপর চড়াও হন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। আলি উগ্র ভাষায় মেয়েটিকে ধমকাতে শুরু করেন। মেয়েটি প্রতিবাদ করে তাকে গলা নামিয়ে কথা বলতে বলেন। তার পরিচয় জানতে চান। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে আরও ১৫-২০ জন মানুষ জুটে যায়। সবাই একজোট হয়ে তরুণ-তরুণীকে ওই স্থান ত্যাগ করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এসময় এক ব্যক্তি এসে তরুণীর পক্ষ নিলে তাকেও খারাপ ভাষায় কথা বলা হয়। মেয়েটি তখন বলেন, সবাই তো এখানে প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। তাদের কেনো নিষেধ করছেন না। মেয়ে বলেই আমাকে বাধা দিচ্ছেন? তখন আলি বলেন, হ্যাঁ মেয়ে বলেই বাধা দিচ্ছি। আরেকজন বলেন, এভাবে প্রকাশ্য মেয়ে মানুষ ধূমপান করলে তাদের পাড়ার মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে। ভদ্রভাবে উঠে যেতে বলছি, আপনারা উঠে যান। তখন তরুণীর সঙ্গে থাকা তরুণ বলেন, সিগারেট ফেলে দেওয়া হয়েছে। এখন তো ধূমপান হচ্ছে না। এখন বসে থাকতে আপত্তি কেনো? তখন আলি বলেন, এক মুহূর্ত এখানে বসা যাবে না। এখনই উঠে যান।
এক পর্যায়ে তরুণ-তরুণী উঠে যেতে বাধ্য হন। যাওয়ার সময় তরুণী পেছন ফিরে তাকান। তা দেখে আক্রমণকারী আরেকজন লোক চেঁচিয়ে বলেন, আবার ট্যারা চোখে তাকাচ্ছে।’
জানতে চাইলে শহিদ হোসেন আলি হোসেন বলেন, ‘একজন মেয়ে মানুষ প্রকাশ্যে সিগারেট খাচ্ছিলো। এটা খারাপ দেখা যাচ্ছিলো। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিলো। পাড়ার মেয়েরা খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই ভালোভাবে নিষেধ করেছি। উঠে যেতে বলেছি।’
পুরুষদের সিগারেট খেতে নিষেধ করেন না কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’ছেলে-মেয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। ছেলেদের নিষেধ করা যায় না। কিন্তু মেয়েরা প্রকাশ্যে সিগারেট খেলে খারাপ লাগে।’