আজ শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিনে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল পৌরসভার ঝালুয়া এলাকায় লিপি আক্তার নামের এক নারীর এসব কথাগুলা বলছিলেন।
হেই বেইন্যার (সকাল) সময় বাইর অইছলাম। তহনো মাইনষে মাডও (ঈদ মাঠ) গেছে না। তহন থাইক্যাই পাড়াত পাড়াত ঘুরতাছি। কোরবানি পর গোশত কেউ দিলে দিছে আর কেউ না দিছে।
বেহেই কয় পরে আইও। পরে গেলে কয় শেষ অইয়া গেছে। দুপুরের পর পোলাও-গোশত গন্ধ পাইয়া ছেড়াডা, এরপর খালি খাইতো চাইছে। কিন্তু কেউ জিগাইছেও না।
আজ শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিনে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল পৌরসভার ঝালুয়া এলাকায় লিপি আক্তার নামের এক নারীর এসব কথাগুলা বলছিলেন।
ওই সময় তিনি তিন বছরের শিশু আলিফ লামকে কোলে নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে ছিল একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ।
নান্দাইল উপজেলার সাভার গ্রামের মৃত রহমত উল্লাহর স্ত্রী লিপি আক্তার। প্রায় সাত মাস আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার স্বামী। এরপর থেকেই দুই সন্তান নিয়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি।
লিপি জানান, স্বামীর জীবদ্দশায় ভালই ছিলেন। স্বামী মারা গেলে কেউ খোঁজ নেয়নি। সহায় সম্পদ বলতে কিছুই নেই। এ অবস্থায় নাবালক দুই সন্তান নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। এই ঈদে সন্তানদের নতুন কোনো কাপড় কিনে দিতে পারেননি। কোরবানিতে লোক লজ্জা দূর করে অন্যদের সাথে পাড়ায় যান মাংস আনতে। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো এমন পরিস্থিতিতে সারাদিন ঘুরেও দুই কেজি মাংস সংগ্রহ করতে পারেননি। একটু পোলাও-গোশত খাওয়াইতে পারেননি ছেলেকে। দুপুরের পর ছেলের প্রচন্ড ক্ষুধা লাগলে দোকান থেকে একটি পুরি কিনে দেন। আর তা খেতে খেতেই শান্ত হয়ে পড়ে শিশুটি। সন্ধ্যা হয়ে আসলে ক্লান্ত শরীরে তিনি বাড়ির দিকে রওনা হন।
লিপির সঙ্গে ছিলেন আছিয়া বেগম (৭০) নামে এক নারী। তিনি তার হাতে দুইটি পলিথিন ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ‘বাজান অহন তো নিজেই শরম লাগে। আগে কোরাবনির পরে দুই ঘণ্টা পাড়াত গেলেই বড় বেগ ভর্তি গোশত পাইতাম। কিন্তু অহন কয়েকজনে দুইএক টুরহা দিয়া কয় নাই। আসলে বেহেরেই ফিরিজ (ফ্রিজ) আছে। তাড়াতাড়ি ফিরিজে তইয়া দেয়। এই দেহেন (পলিথিন দেখিয়ে) সারদিনের কামাই। দুই কেজিও অইতো না। শইলডা শেষ।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলী হোসেন (শ্যামল)
ঠিকানা: উত্তরা, ঢাকা ১২৩০
মোবাইল: 01854579306